জাতীয়শিক্ষা

সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল সোনাতলার জাওয়াদ

রবিউল ইসলাম শাকিল,

সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল সোনাতলার জাওয়াদ

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হরিখালি গ্রামের সন্তান জোহায়ের হাসনাইন জাওয়াদ কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং পারিবারিক ভালোবাসার শক্তি নিয়ে দেখিয়েছেন অসাধারণ সাফল্যের উদাহরণ। ভর্তি পরীক্ষায় সাতটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে তিনি নিজ এলাকার ও পরিবারের গর্ব হয়ে উঠেছেন।

ছোটবেলা থেকেই জাওয়াদের বেড়ে ওঠা নানার বাড়ি সোনাতলায়। তাঁর নানা, মরহুম প্রফেসর আব্দুর রহিম, এলাকার একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ছিলেন। সেই শিক্ষার পরিবেশেই শিশু জাওয়াদের ভিত তৈরি হয়।

প্রাথমিক জীবন শুরু করেন আগুনিয়াতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর সরকারি সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং পরে বগুড়া সরকারি কলেজ থেকে সফলভাবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিটি স্তরেই জিপিএ ৫ এবং সাধারন ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জন করেন।

ভর্তি পরীক্ষায় নজরকাড়া সাফল্য  

জাওয়াদ নিজের মেধা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে একযোগে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন:

★কুয়েট: ২৭৮২তম (৩য় কল)

★চুয়েট: ১৭১৫তম

★রুয়েট: ২০৬১তম

★ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৫৭৭তম

★বুটেক্স: ২৭৩তম

★জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ৮ম স্থান

★বিউপি: ৪র্থ ওয়েটিং লিস্টে ১৩৫ তম হন।

বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ACCE বিভাগে পড়ার স্বপ্ন পূরণের পথে আছেন তিনি। তাঁর লক্ষ্য — যে বিষয়ে পড়বেন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করে দেশের জন্য অবদান রাখা এবং পরিবার ও এলাকার সম্মান বৃদ্ধি করা।

জাওয়াদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক কঠিন সংগ্রামের গল্প। দ্বাদশ শ্রেণি থেকেই প্রাইভেট টিউশন বাদ দিয়ে নিজের পড়াশোনার ভার নিজেই নেন। ভর্তি প্রস্তুতির সময় ঢাকায় ভাইয়ার বাসায় (উত্তর বাড্ডা) থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। প্রতিদিন ফার্মগেট এলাকায় কোচিংয়ে যাতায়াত, যানজটের ভোগান্তি, শীতকালে গ্যাস সংকটে রান্নাবান্নার সমস্যা—সবকিছু সহ্য করে নিজের লক্ষ্যকে আঁকড়ে রেখেছিলেন।

উদ্ভাস কোচিংয়ে প্রথমদিকে ভালো মার্ক পেয়ে তুখোড় ব্যাচে সুযোগ পেলেও পরে পড়ার সময়ের সংকটে সাধারণ ব্যাচে চলে আসেন এবং অনলাইন ক্লাস নিয়মিত করে পড়াশোনা চালিয়ে যান।

জাওয়াদ জানান, কঠিন সময়েও পরিবারের ভালোবাসা ও মানসিক সমর্থন ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। বিশেষ করে নানি — প্রতিদিন সকালে ফোন করে ঘুম থেকে উঠানো, পড়াশোনার খোঁজ নেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থেকেছেন। ভাইয়া, আব্বু, আম্মু, মামারা, চাচ্চুরা—সবাই তার মাইলফলকের সঙ্গী হয়েছেন।

জাওয়াদ মনে করেন, এই সাফল্যের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব মহান আল্লাহর। এরপর পরিবার, নানি ও ভাইয়ার সহযোগিতায় তিনি তাঁর জীবনের অন্যতম বড় ধাপ অতিক্রম করেছেন।

জাওয়াদের লক্ষ্য হলো, Applied Chemistry & Chemical Engineering (ACCE) বিভাগে পড়াশোনা করে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতায় উচ্চতর মান অর্জন করা, গবেষণায় অবদান রাখা এবং ভবিষ্যতে এমন কিছু করা, যাতে পরিবার ও এলাকা তাঁর জন্য গর্বিত হতে পারে — এটাই তাঁর মূল লক্ষ্য। সর্বোপরি, একজন ভালো ও মানবিক মানুষ হয়ে ওঠাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button