বগুড়ার খবর

মাসনবির ড্রাগন চাষ উপার্জন হয় বারোমাস

ইকবাল কবির লেমন

 

তারুণ্যদীপ্ত এক যুবকের নাম হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার নাশিদুল হক মাসনবি। বগুড়ার সোনাতলা সৈয়দ আহম্মদ কলেজ স্টেশন এলাকার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠলেও পড়াশুনা করেছেন ইংল্যান্ডের প্লে মাউথ ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে বিএসসি ডিগ্রী সম্পন্ন কওে মাসনবি ভাবতে থাকেন কিভাবে দেশে থেকেই হালাল আয় করা যায়। এ ভাবনা নিয়ে দেশে এসে বাবা সোনাতলা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সৈযদ আহম্মদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সৈয়দ নজবুল হকের কাছ থেকে প্রাপ্ত পৈত্রিক জমিতে পেপে ও শাকসব্জি চাষ শুরু করেন। কিন্তু এ চাষাবাদে ততটা সুবিধা করতে না পেয়ে বন্ধু হাফেজ মশিউর রহমানের পরামর্শে উপজেলার জোড়গাছা ইউনয়নের মধ্য দিঘলকান্দি গ্রামে একবিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে মনোনিবেশ করেন। সাফল্য পেলে একই জায়গায় আরও সাড়ে তিনবিঘা জমিতে সম্প্রসারণ করেন ড্রাগন চাষ। ঘটনাটি ২০১৭ সালের। মাত্র একবছরের ব্যবধানে আসতে থাকে সাফল্য। সবুজে ছেয়ে যায় ড্রাগন বাগান। আসতে শুরু করে ফুল । একসময় লাল ফুল পরিপূর্ণ ফলে পরিণত হয়। শুরু হয় বৈচিত্রময় ড্রাগন চাষে হালাল অর্থ উপার্জনের গল্প। বর্তমানে তাঁর সাড়ে চার বিঘার ড্রাগন বাগানে কাজ করেন ৫ জন কর্মচারী। প্রতিজনকে তিনি মাসিক বেতন দেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি বাৎসরিক আয় করেন ৩ লাখ টাকা। প্রায় প্রতিদিন ফল ব্যবসায়ীরা এসে সরাসরি বাগান থেকে ড্রাগন ফল নিয়ে যান।
কথা হয় সফল ড্রাগনচাষী হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার নাশিদুল হক মাসনবির সাথে। তিনি জানান, ‘প্রচলিত ফসলের চেয়ে ড্রাগন চাষ করলে দ্রুত সফলতা পাওয়া সম্ভব। আমি ভবিষ্যতে ড্রাগন চাষ আরও সম্প্রসারণ করতে চাই।’
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, ‘আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সবসময় ড্রাগনচাষী হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার নাশিদুল হক মাসনবিকে সাপোর্ট দিয়েছি। আমাদের এধরনের সাপোর্ট অব্যাহত থাকবে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ফাইবার ও ফ্যাট ফ্রি, বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, আয়রনসমৃদ্ধ ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ও ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড। হার্টকে সুস্থ রাখতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে,ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ড্রাগন ফলের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এধরনের চাষাবাদকে আরও উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ড্রাগন চাষের মতো এ ধরনের কাজে সবসময় সবধরনের সেবা দেবে। অন্য কেউ ড্রাগন চাষে আগ্রহী হলে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কারিগরি সহায়তা দেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।’ তিনি সফল ড্রাগনচাষী হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার নাশিদুল হক মাসনবিকে অভিনন্দন জানিয়ে অন্যান্য বেকার যুবকদেরও শুধু চাকরির প্রত্যাশায় না থেকে এধরনের ব্যতিক্রমী চাষাবাদে এগিয়ে এসে স্বাাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button