দান-অনুদানে সোনাতলার যমুনাতীরের দুর্গম চরে নির্মিত হচ্ছে দেড় কিলোমিটার সড়ক

ইকবাল কবির লেমন
বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার যমুনা তীরবর্তী প্রত্যন্ত এক জনপদের নাম তেকানী চুকাইনগর। কড়ালগ্রাসী যমুনার কবলে পরে বারবার তেকানী চুকাইনগরের মানচিত্র থেকে হারিয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। নদীর কারণে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বেশ কিছু লোকালয়। ওই লোকালয়গুলোর জনসাধারণ বিড়ম্বনাহীন যোগাযোগ সুবিধা না পাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ থেকেছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। যমুনার ছোট ছোট শাখা পেরিয়ে, পায়ে হেটে নানা কৌশলে তাদেরকে যুক্ত হতে হয় সমাজের মূল ¯্রােতধারায়। সোনাতলার তেকানী চুকাইনগরের এমনি কয়েকটি গ্রামের নাম চরমোহনপুর, চর চুকাইনগর, ভিকনেরপাড়া, সরলিয়া, খাবুলিয়া, মষেরপাড়া, আউচারপাড়া । এই গ্রামগুলোর কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে পানিতে নেমে শাখা নদী ডিঙিয়ে কোলে- ঘাড়ে নেয়া ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিলনা। কৃষি পণ্য পরিবহনেও ছিল চরম বিড়ম্বনা। গ্রামগুলোর সন্তানেরা শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে অবর্ননীয় দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত ছিল।
এই সমস্যা লাঘব করে সহজে কী করে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়-এমন চিন্তা মাথায় সোনাতলার পূর্ব তেকানীসহ তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নবাসীর। এ লক্ষে পূর্ব তেকানী গ্রামে সভা আহ্বান করা হয়। সভায় যোগদান করা ব্যক্তিবর্গ নিজস্ব অর্থায়নে পূর্ব তেকানীর পিএমডি দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা থেকে চরমোহনপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী স্বেচ্ছায় দান-অনুদান নিয়ে হাজির হন এলাকার মানবিক ব্যক্তিবর্গ। ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামানিক সড়ক নির্মাণে এগিয়ে আসা ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অর্থায়নে সড়কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে বেশ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে সড়কটির নির্মাণ কাজ।
এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় সমাজকর্মী ইব্রাহিম হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এ সড়কটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে সোনাতলার চরমোহনপুর, চর চুকাইনগর, ভিকনেরপাড়া, সরলিয়া, খাবুলিয়, মষেরপাড়া, আউচারপাড়া তৎসংলগ্ন গ্রামগুলোর এবং সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলতাইড়, কাকালিহাটা, বোহালাডাঙা, সুজালেরপাড়া, তেলিগাড়ি, হাটবাড়ি, পাতিলমারি, চর প্রজাপতি, ভাঙরগাছা গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা মুক্ত হয়ে সহজ যোগাযোগ সুবিধা পাবে।
পূর্ব তেকানীর বংশবাড়ির বাসিন্দা গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘এ সড়কটি নির্মাণের ফলে যমুনাতীরের অসংখ্য মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।’
তেকানী চুকাইনগর ইউপির সদস্য জামিরুল ইসলাম এ সড়ক নির্মাণ কাজে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
তেকানী চুকাইনগর অমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেনের সাথে নির্মাণাধীন সড়কটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান , ‘এলাকাবাসী ব্যক্তি উদ্যোগে, দান-অনুদান নিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকারি অনুদান যুক্ত হলে দুরুহ একাজটি সম্পন্ন করা সহজ হবে। যারা এখনও সহযোগিতার হাত বাড়াননি তাদের এবং এবং সদাশয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে মহতি এ কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’