সারাদেশ

দুই যুগের অধিক সময় ধরে বন্ধ ভরতখালী-তিস্তামুখঘাটের রেল যোগাযোগ

জয়নুল আবেদীন,সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

দুই যুগের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী – তিস্তামুখঘাটের রেল যোগাযোগ। রেল কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় বন্ধ এ পথের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে । তিস্তামুখঘাট হতে ভরতখালীর শেষ সীমানা পর্যন্ত রেলের যায়গা, কলোনী কোয়াটার, প্রভাবশালীরা অবৈধ উপায়ে দখল নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে যে যার ইচ্ছা মতো ভোগ করছে। হরিলুট করে নিয়ে যাচ্ছে এ রুটের রেললাইন সহ মূল্যবান সম্পদ। প্রতি নিয়ত দেদারছে রেলের মূল্যবান সম্পদ দখল ও হরিলুট হয়ে গেলেও এসব দেখার কেউ নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ হরিলুটের বিষয়ে রেল কতৃপক্ষের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার মিলছেনা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বোনারপাড়া রেল স্টেশন থেকে তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত রুটে অবস্থিত ভরতখালী স্টেশন। বিগত ১৯৩৮ সালে বৃটিশ সরকার, জামালপুর, শেরপুর,নেত্রকোনা,ময়মনসিহং, টাঙ্গাইল ও ঢাকার সাথে উত্তর অঞ্চলের রংপুর দিনাজপুর, লালমনিরহাট, লীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁ ও গাইবান্ধার রেল যোগাযোগ জন্য এ রেলপথ স্থাপন করা হয়। দু’পারের সাথে যোগাযোগের জন্য তিস্তামুখ-ঘাট বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত যমুনা নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হলে ফেরি সার্ভিসসহ রেলপথটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে বোনারপাড়া, ভরতখালী ও তিস্তামুখ-ঘাট পর্যন্ত রেল যোগাযোগ। দুই যুগের অধিক সময় ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভরতখালী- তিস্তামুখ ঘাটের রেল পথ সহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ অরক্ষিত হয়ে পড়লে স্থানীয় একটি চক্র রেলপথের সমস্ত কাঠের মূল্যবান স্লিপার গুলো অনেক আগেই চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন তিস্তামুখ-ঘাট, ভরতখালী রেলস্টেশনের রেলপথে শুধু রেললাইন ছাড়া আর কিছুই নেই। নিচের মাটি ক্ষয় হয়ে সরে এলোমোলো হয়ে গেছে রেললাইন। অযত্ন-অবহেলায় রেললাইনগুলো মরিচা পড়ে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেটে নিয়ে যাওয়া রেললাইলের অবশিষ্ট অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ পথে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায়, মূল্যবান রেললাইনগুলো মাদকাসক্তরা রাতে চুরি করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্টেশনের পিছনের থাকা গুদাম ঘর ও কোয়াটার সহ স্থাপনাগুলোর ইট ও মালামাল সবই চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া স্টেশনের অধিনে তিনটি কলোনীর কো‌‌য়ার্টার স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিজেদের মতো ব্যবহার করছেন। স্টেশনের এমন বেহাল অবস্থা চোখে পড়লেও এ সময় রেল কর্তৃপক্ষের কোনো লোকজনকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, চালু অবস্থায় এ স্টেশন এলাকা ছিলো জমজমাট ও আনন্দমুখর। রেল পথ বন্ধ হওয়ার পর থেকে এ স্টেশন এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রেলের সাথে সংশ্লিষ্ট এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লিটন মন্ডল জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে এই স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রায় এক হাজার একর জমি, তিনটি স্টাফ কলোনী কোয়াটার, স্টেশন ঘর,গুদাম ঘর, ৯ টি রেল লাইন ছিলো এ স্টেশনের অধিনে। রেলের বিপুল অর্থের সম্পদ এখন সবই পরিত্যক্ত হলেও এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কতৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই। সক্রিয় কোনো পদক্ষেপ না নিলে এ এলাকার বিপুল পরিমান সরকারী সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব নয়। লালমনিররহাট রেলওয়ে বিভাগের বগুড়া-বাদিয়াখালী রেল পথের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বন্ধ ভরতখালী রেল স্টেশনের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন সরকারী পাহারাদার নিয়োগ করা আছে। প্রয়োজনে আরও একজন পাহারাদার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে বলেন,উচ্ছেদ অভিযানের দায়িত্ব ভূ-সম্পদ বিভাগের কর্মকতার। দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূ-সম্পদ বিভাগের কর্মকতার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button