১৫ বার অকৃতকার্য হয়েও থেমে যাননি হিমেল; চান্স পেলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

রবিউল ইসলাম শাকিল

মোঃ হাসনাত হাসান হিমেলের গল্প এক অনন্য উদাহরণ, যা প্রমাণ করে পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের কাছে কোনো বাধাই টিকে থাকতে পারে না।
বগুড়ার সোনাতলার গড়ফতেপুর গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম হিমেলের। বাবা মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, আর মা হোসনে আরা বেগম একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন হিমেল। প্রাইমারির পাঠ শেষ করেন পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় থেকে, পরে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন সরকারি সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন বগুড়া সরকারি কলেজে। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও তার পথচলা ছিল বেশ কঠিন।
ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তুতি নিলেও, কলেজের বায়োলজি ভাইভায় শিক্ষকের করা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার কারণে তাকে শ্রেণিকক্ষ থেকে প্রায় বের করে দেন। এই ঘটনা তাকে ভাবিয়ে তোলে। এরপর থেকে মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা জন্ম নেয় তার মধ্যে। কিন্তু জীবনের পথচলা তো আর সহজ নয়। প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে স্বপ্নের পেছনে ছুটতে থাকেন। কিন্তু একের পর এক ১৫টি ব্যর্থতা তাকে প্রায় হতাশার গহ্বরে ফেলে দেয়। পরিবারের সবার ধারণা ছিল, হিমেল হয়তো মনোযোগ দেয়নি পড়াশোনায়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তবু ফল আসেনি।
একসময় হিমেল নিজেকেই প্রশ্ন করলেন, ব্যর্থতার আসল কারণ কী? উত্তর এলো—ভয়! পরীক্ষার হলে গিয়ে ভয় কাজ করত। যদি চান্স না পাই? বাসায় সবাই কী বলবে? কিন্তু একটা মুহূর্তে এসে উপলব্ধি করলেন—সাঁতার শিখতে হলে পানিতে ডোবার ভয় দূর করতে হয়, আকাশে উড়তে হলে ছোট ডালে বসার অভ্যাস ছাড়তে হয়। ভয়কে জয় করে শেষবারের মতো তিনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষা দিলেন—১৬তম বার!
এবার হলো কেল্লাফতে! কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৩৩৬তম স্থান অর্জন করলেন তিনি। এখন তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি সাইন্স (ডিভিএম) নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
হিমেলের এই গল্প শুধু একজন শিক্ষার্থীর লড়াই নয়, এটি প্রতিটি সংগ্রামী তরুণ-তরুণীর জন্য একটি দৃষ্টান্ত। ব্যর্থতা কখনো শেষ নয়, যদি লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়। হিমেল প্রমাণ করেছেন, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস থাকলে একসময় সাফল্য ধরা দিতেই হবে।