সোনাতলার আসাদুজ্জামান বুয়েটে ৩৬৬তম; স্বপ্নের পথে দুর্বার যাত্রা মেধা, অধ্যবসায় আর আত্মত্যাগ—এই তিনের সমন্বয়ে রচিত হয়েছে মো. আসাদুজ্জামানের সাফল্যের গল্প। বগুড়া'র সোনাতলার শিহিপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া আহাদুজ্জামান ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী ও একাগ্র। তার বাবা মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু একজন কৃষক, আর মা মোছাঃ মর্জিনা আক্তার গৃহিণী। পারিবারিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও স্বপ্নের পথে কখনো থেমে যাননি তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন শিহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর সুখানপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। প্রতিটি ধাপেই রেখেছেন অসাধারণ সাফল্যের স্বাক্ষর। প্রাথমিক ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাতেও পেয়েছেন সাধারণ বৃত্তি। তবে এবারে তার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া। বুয়েটে ৩৬৬তম স্থান অর্জন করে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) বিভাগে তিনি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এছাড়া কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও ভালো অবস্থানে ছিলেন। এই সাফল্যের পেছনে আসাদুজ্জামানের কঠোর পরিশ্রম তো ছিলই, পাশাপাশি ছিল তার পরিবারের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন। বাবার অসুস্থতার কারণে শেষ দিকে
তার পড়াশোনার ব্যয় বহন করেন বড় ভাই আহাদুজ্জামান কৌশিক, যিনি নিজেও কুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। টিউশনি করে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে গেছেন তিনি। আর্থিক সংকট কখনো তার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, কারণ পরিবার কখনো তাকে বুঝতে দেয়নি সেই কষ্টের কথা। তবে শুধুমাত্র পরিবারের সহযোগিতাই নয়, তার সাফল্যের পেছনে ছিল কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহায়তা। বড় ভাইয়ের বন্ধুরা—আব্দুল হালিম, আব্দুর রউফ লিখন, সাজিদ মাহমুদ এবং অনিক সরকার—প্রতিনিয়ত তাকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাজশাহীর কিছু গুণী শিক্ষকের সহযোগিতাও তাকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এতদূর আসার পর আসাদুজ্জামানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও বেশ সুস্পষ্ট। প্রথমে ভালোভাবে বিএসসি সম্পন্ন করা, তারপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেওয়া—এটাই তার স্বপ্ন। জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের জন্য পথ তৈরি করাই তার লক্ষ্য। আসাদুজ্জামানের জীবন আমাদের শেখায়, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনো প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব। সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও নিজের স্বপ্ন পূরণ করা যায়, যদি থাকে অদম্য মনোবল আর একাগ্রতা। তার গল্প হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যারা স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার, যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও আলোর দিশা খোঁজে।