জয়নুল আবেদীন,সাঘাটা(গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সাঘাটায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকেরা জমিতে চারা পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার,সারপ্রয়োগ ও পানি দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু নিজেদের চাহিদা পুরণে নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। ভালো দাম পেতে আগাম শাক-সবজির চাষে ঝুকছেন তারা।নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাহিরের জেলাগুলোতেও বিভিন্ন জাতের সবজি চারা পাঠাচ্ছেন কৃষকেরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে বেশ মনোজোগের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন। উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে এখনো পাওয়া যাচ্ছে শীতকালীন শাক-সবজির চারা। জাত-ভেদে সবজির চারার দামও ভিন্ন ভিন্ন। পেশাদার কৃষক ছাড়াও শৌখিন মানুষেরা শখের বশে বাড়ির ছাদ ও আঙিনা কৃষিতে ঝুঁকছেন। উপজেলার খামারপবনতাইড় ও থৈকরেরপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রোপন করা সবজির চারায় ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি শিম, মরিচ,পেঁয়াজ,ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, তিল,পটল, ঢেঁড়স,শশা, কুমড়া,পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা। মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকরা। কাকডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন সবজি ক্ষেত পরিচর্যায়। সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত ক্ষেতে পরিচর্যা করে বাড়ি ফিরছেন। এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের কর্মব্যস্ততা। দিনের পরদিন বেড়েই চলছে কাজের চাপ। পবনতাইড় গ্রামের কৃষক আবু জাফর জানান, আমাদের জমিগুলো সবজি চাষের জন্য উপযোগি। তাই প্রতিবছ ৪ থেকে ৫ বিঘা জমিতে মরিচ,পেয়াজ, কপি,বেগুনসহ বিভিন্ন ধরণের
সবজি চাষ করে থাকি। প্রতিবছর সবজি থেকে মোটামোটি ভালো অর্থ আয় হয়। তার জমির উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়না। জমিতে থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে ক্রয় করে নিয়ে যায়। প্রতিবারের ন্যায় লাভের আশায় এবারও তিনি ৫ বিঘা জমিতে সবজি চারা রোপন করেছেন। শুধু আবু জাফর একাই নয়, প্রতিবারের ন্যায় আগাম সবজি চাষ করছেন, কৃষক জোবায়দুর,জাফরুল, জহুরুল,খলিলুর, সাইফুল,আপেল,আনোয়ার হোসেন সহ শত শত কৃষক। তারা জানান, জমিতে বন্যা ও বৃষ্টির পানি জমার ভয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় কেহ আবার রাস্তার পাশে ও বাড়ির ছাদে পলিথিনের ছাদ দিয়ে ঢেকে সবজির চারা তৈরি করেছেন। তাদের তৈরি চারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চারা বাজারে বিক্রি করেছেন। চারা বিক্রির টাকা শ্রমিককের মজুরি ও কৃষি উপকরণ ক্রয়ের কাজে ব্যয় করতে পেরে কিছুটা শস্তিবোধ করতে পারছেন কৃষকরা। তারা অন্যান্য বারের চেয়ে এবার সবজি থেকে অধিক আয়ের আশা করছেন। সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান জানান, আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে তিন মৌসুমে রবি ফসল হয়। সে অনুযায়ী এবারও ১৬ অক্টোবর হতে সবজি চারা রোপন এবং বীজবোনার কথা। কিন্তু এলাকায় বন্যা না হওয়ায় ও অনুকুল আবহাওয়া থাকায় এবার বেশি মুনাফার আশায় কৃষকরা আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন। এখনও চারা রোপন শেষ না হলেও এবার ৪৬৭ হেক্টর জমিতে সবজি সহ রবি ফসলের চাষ হবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি বলেন শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুল থাকলে অন্যান্য বারের চেয়ে কৃষকরা এবার অধিক মুনাফা অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে।