আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে, শিশুর বিকাশ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে, শিশুকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পোঁছে দিতে অভিভাবকের ভুমিকা অপরিহার্য। জন্মের পর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে শিশুর আচরণ, দক্ষতা, কার্যক্ষমতা ও যোগ্যতার পরিবর্তন হয়। শিশুর বিকাশ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য অভিভাবকদেরকে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়, যেমন-অভিভাবককে শিশুর প্রতি মনোযোগী হতে হবে। মনোযোগ দিয়ে শিশুর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শিশুকে ভালো-মন্দ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। শিশুকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে হবে, কারণ ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী জয় করা যায়। ভালোবাসা দিয়েই শিশুকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। শিশুদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। অভিভাবককে মনে রাখতে হবে অতীত দিনের সাথে বর্তমানের সময়কে মিলিয়ে নিলে চলবে না। নতুনকে গ্রহণ করা শিখতে হবে। শিশুর সাথে যদি বন্ধুসুলভ আচরণ করা হয় তাহলে শিশু তার মনের সমস্ত কিছু অভিভাবকদের সাথে শেয়ার করতে পারবে। নিজেদের সিদ্ধান্ত সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সন্তানের সহিত আলোচনা করতে হবে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে, সম্মান করতে হবে। অভিভাবকের প্রধান যে দায়িত্ব হলো- সন্তানকে লালন-পালন করা। তাকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিশুর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা অর্থাৎ শিশুর যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। সচেতন হতে হবে সন্তান কেমন বন্ধু নির্বাচন করছে। আমরা জানি সৎ সঙ্গে স্বর্গে বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। শিশু কেমন বন্ধুর সাথে চলাফেরা করছে, সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। অনেক অভিভাবক শিশুদেরকে পড়ালেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন। ফলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। সন্তানকে এক্সট্রা কারিকুলাম
অ্যাক্টিভিটিসে উৎসাহিত করতে হবে। শিশু পড়ালেখার পাশাপাশি যতো বেশি বিভিন্ন কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসে সংযুক্ত থাকবে ততো বেশি সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। শিশুকে সুস্থ বিনোদনের সুযোগ করে দিতে হবে। অভিভাবককে তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে হবে। জানতে হবে শিশু মন বড়দের যেমন বিনোদনের প্রয়োজন তেমনি শিশুদেরও বিনোদনের প্রয়োজন। পাঠ্যবই এর পাশাপাশি অন্য বই যেমন গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞান ভিত্তিক বই, কমিক্স বই, কবিতা ইত্যাদি বই পড়তে শিশুদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে- বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। অনেক অভিভাবক, কারণে-অকারণে শিশুকে অন্য শিশুর সহিত তুলনা করেন যা একটি শিশুর জন্য অপমানজনক। অভিভাবককে জানতে হবে-বড়দের যেমন ব্যক্তিত্ব আছে, তেমনি শিশুদের ব্যক্তিত্ব আছে এবং তাদের ব্যক্তিত্ব আরো স্পর্শকাতর। শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া জরুরী। শিশুকাল থেকেই যদি অভিভাবকরা শিশুদেরকে নৈতিকতা, মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দেয় তাহলে শিশুর পরবর্তী জীবন সুন্দর হয়। শিশুকাল থেকেই শৃঙ্খলার শিক্ষা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া, সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বিষয়গুলোকে দৃষ্টি দিতে হবে। বড়দের সাথে, শিক্ষকদের সাথে, সহপাঠীদের সাথে আচরণ কেমন হবে, যে শিক্ষা শিশুকাল থেকেই দিতে হবে। অভিভাবককে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় শিশুদেরকে দিতে হবে। যদি সময় না দিয়ে, অন্যান্য চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে কোন চেষ্টায় ফলপ্রসু হবে না। আসুন আমরা সবাই শিশুর বিকাশের সহায়তা করি, নিজেরা সচেতন হই। শিশুদেরকে ভালো মানুষ হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করি। নিজেদের দায়িত্ব, নিজেরা সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে সুন্দর হবে দেশ, সুন্দর হবে জাতি, সুন্দর হবে পৃথিবী। আয়েশা সিদ্দিকা সহকারী শিক্ষক আমলীতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতলা, বগুড়া।