জয়নুল আবেদীন,সাঘাটা(গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির অহংকার। মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো বাঙালি অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছে দেশের জন্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। তাদের কেউ আমাদের চেনা,কেউবা অচেনা । বাঙালির শ্রেষ্ঠ এই সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত রাখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে বিজয়ের স্মৃতি স্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি ফলক ও মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর। এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে আছে বধ্যভুমি । মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিই বহন করছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়ন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে বিজয়ের স্মৃতি স্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি ফলক ও মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর । ১৯৭১ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে সাঘাটা-ফুলছড়ির কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধার সশস্ত্রদল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ ৫ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহেদুল ইসলাম বাদল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাবেজ আলী। এ যুদ্ধে সেদিন ২৭ জন পাকিস্তানী সেনাও নিহত হয় । পরদিন ৫ ডিসেম্বর ওই ৫ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ চরাঞ্চল থেকে গরুর গাড়ীতে বহন করে নিয়ে এসে সাঘাটা উপজেলার তৎকালিন সগুনা ইউনিয়নের ধনারুহা এলাকায় (বর্তমান মুক্তিনগর ) সমাহিত করা হয় । পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি উজ্জীবিত সহ ৫ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৮৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধাগণের যৌথ উদ্যোগে পুটিমারী এলাকা থেকে
সগুনা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন স্থানান্তর করে ধনারুহায় নিয়ে আসা হয় এবং সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় “মুক্তিনগর” । ইউনিয়নের নাম পরিবর্তনের সাথে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে ও মুক্তিযুদ্বের স্মৃতি উজ্জীতি রাখতে ধনারুহায় স্থাপন করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ । সেখানে ৫ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বরণে প্রতিবছর পালন করা হয় স্বরণ সভা। এর ফলে তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারছেন । কেবল ইউনিয়নের নামই মুক্তিনগর করা হয়নি, ধনারুহায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, মুক্তিনগর স্মৃতি স্থম্ভ মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর, মুক্তিনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, মুক্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও মুক্তিনগর ইনিয়ন কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে । ফলে মুক্তিনগর ইউনিয়নের নাম শুনলেই মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হয। এই নামকরণের মধ্য দিয়ে মক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তরুন প্রজন্মের মাঝে চিরস্বরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করা মুক্তিনগর ইউনিয়টি সারাদেশের অনন্য দৃষ্টন্ত হয়ে থাকুক তরুন প্রজ¤েœর হৃদয়ে এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের। মুক্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, এই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও স্মৃতিসৌধের কারণে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরবর্তী প্রজন্মও জানতে পারবে। সাঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আজহার আলী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে সরকারী উদ্যোগে আরও উন্নয়নের প্রত্যাশা করেন। মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আহসান হাবীব লায়ন বলেন, মুক্তিনগর ইউনিয়নটি মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা বহন করছে। এটা আমার ইউনিয়ন বাসির জন্য অহংকার। সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসাহাক আলী বলেন,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্বরণীয় করে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।