
রবিউল ইসলাম শাকিল

সায়িফ মুরছালিন, বগুড়ার সোনাতলার এক মেধাবী শিক্ষার্থী, যিনি এবার ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট (TEM) বিভাগে। তার এই পথচলা সহজ ছিল না; ছিল হতাশা, ধাক্কা, অনিশ্চয়তা আর অনেক অনেক মানসিক চাপের গল্প।
সায়িফের শিক্ষাজীবনের শুরু আগুনিয়াতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তিনি পড়াশোনা করেন সরকারি সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এবং কলেজজীবন শেষ করেন সরকারি নাজির আখতার কলেজে। ছোট শহরের এক সাধারণ ছেলে হয়েও স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার।
প্রথম ধাক্কা আসে ভর্তি পরীক্ষার আগেই। হঠাৎ করেই CKRUET ভেঙে দেওয়া হয় এবং পরীক্ষার প্যাটার্নেও আসে বড় পরিবর্তন। প্রস্তুতি নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা তখন দারুণ হতাশাজনক ছিল সায়িফের জন্য। তবু দমে যাননি তিনি।
সায়িফ প্রথম পরীক্ষা দেন কুয়েটে। ফল প্রত্যাশিত না হলেও বিষয় পাওয়ার মতো স্কোর ছিল। এরপর একে একে অংশ নেন বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, ঢাবি, চবি ও বুটেক্সের ভর্তি পরীক্ষায়। বুয়েটের লিখিত পরীক্ষার ফল হতাশাজনক হলেও হতাশায় ডুবে যাননি তিনি। যদিও চুয়েট ও রুয়েটে তার মেরিট সিরিয়াল ৪০০০+ হওয়ায় ভর্তির সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ, পরিবারের সাহচর্য তাকে ধরে রেখেছিল লড়াইয়ের ময়দানে।
এই দুঃসময়ে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল পরিবার—মা, বাবা, আপু ও দুলাভাইয়ের অদম্য মানসিক সহায়তা। তাদের কথায় ভর করে এগিয়ে যান তিনি। তার কথায়, “এডমিশন একটা যুদ্ধ, নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ।”
শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বুটেক্স ও ঢাবিতে ভালো ফল করেন সায়িফ। দীর্ঘ অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে। বেছে নেন বুটেক্সের TEM বিভাগ।
সায়িফ আজও কৃতজ্ঞ তার শিক্ষকদের প্রতি, যাঁরা তার একাডেমিক ভিত গড়তে সাহায্য করেছেন। তিনি মনে করেন, “একাডেমিক থেকে ধারাবাহিক প্রস্তুতি, মনোযোগ আর পরিবারের মেন্টাল সাপোর্ট এই দীর্ঘ যাত্রাকে অনেক সহজ করে তোলে।”
“ভবিষ্যৎ একটা অনিশ্চিত বিষয়,” বলেন সায়িফ। তবুও তিনি সামনে এগিয়ে যেতে চান সময়ের দাবি বুঝে। তার আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও মানসিক দৃঢ়তা ভবিষ্যতে তাকে আরও উচ্চতায় পৌঁছাবে, এমনটাই বিশ্বাস করে তার পরিবার, শিক্ষক ও বন্ধুরা।
সায়িফ মুরছালিনের এডমিশন জার্নি শুধু একজন শিক্ষার্থীর গল্প নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের হাজারো তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের প্রতিচ্ছবি!