“পুরোনো খেলার নতুন খেলোয়াড় নয়, আমরা এসেছি নিয়ম বদলাতে”—বগুড়ায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

রবিউল ইসলাম শাকিল

দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেই ঘোষণাই যেন আরও একবার দৃপ্তভাবে উচ্চারিত হলো শনিবার বগুড়ায় আয়োজিত পদযাত্রা ও পথসভায়। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাফ জানিয়ে দিলেন,
“আমরা পুরোনো খেলায় নতুন খেলোয়াড় হয়ে নামিনি, এসেছি সেই খেলারই নিয়ম বদলাতে। রাজনীতির পথ বদলালেই জনগণের মুক্তি সম্ভব।”
পথসভায় নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, বিচার ও সংস্কারের পূর্বে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু বিচার শুরু করাই যথেষ্ট নয়, তা দৃশ্যমান হতে হবে—যাতে জনগণ আস্থা রাখতে পারে। তার ভাষায়,
“তারা বলে বিচার দেরি হবে। কিন্তু আমরা বলছি—বিচার দেরি হতে পারে, শুরুটা আজই হতে হবে। আর একবার শুরু হলে সেটা আর কেউ থামাতে পারবে না, যে সরকারই আসুক না কেন।”
এর আগে বগুড়া পর্যটন মোটেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপি নেতারা। আবেগময় কণ্ঠে নাহিদ ইসলাম বলেন,
“আমরা জানি, আপনাদের ক্ষতি কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। আপনারা আত্মত্যাগ করেছেন স্বাধীনতার, ন্যায়ের, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের পাশে থাকার দায় আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
তিনি অনুশোচনা প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা হয়তো শুরুতেই আপনাদের পাশে যথাযথভাবে দাঁড়াতে পারিনি। আজ ক্ষমা চাইছি, কথা দিচ্ছি—এই সম্পর্ক আজীবনের। আমরা থাকব, যতটা পারি, আপনাদের পাশে।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, তাদের ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শুধু দাবি নয়—এটি একটি রূপরেখা, যেখানে থাকবে শহীদ পরিবারগুলোর স্বীকৃতি ও সুরক্ষা, এবং বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রীয় সংস্কার। তার ভাষায়,
“শহীদদের আত্মত্যাগ যেন শুধু শোকের বিষয় না হয়, তা যেন রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রতিফলিত হয়। আমরা চাই, সংবিধানে যুক্ত হোক এই পরিবারগুলোর কথা, যুক্ত হোক নতুন রাষ্ট্রের নকশা।”
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, বিগত ১৭ বছরে বগুড়ার মানুষ রাজনৈতিক বৈষম্য, মিথ্যা মামলা ও চাকরিতে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন,
“বগুড়ার নাম শুনলেই সরকারি চাকরিতে চোখ রাঙানি দেখা যেত। জনগণ হয়রানির শিকার হতো, প্রশাসন ছিল পক্ষপাতদুষ্ট।”
তিনি বগুড়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে বলেন,
“আপনারা কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না। দেশের পক্ষে কাজ করুন, মানুষের পক্ষে কাজ করুন। এখন প্রয়োজন নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা।”
বিচার, সংস্কার ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবিতে এনসিপির এই পদযাত্রা বগুড়ায় নতুন রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি করেছে। দলটি জানায়, জুলাই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে তারা সারা দেশে চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে গড়ে তুলতে চায় একটি নতুন রাজনৈতিক দিশা। যেখানে ক্ষমতার মূল উৎস হবে জনগণ, আর কেন্দ্রবিন্দু হবে ন্যায়বিচার।