বগুড়ার খবরশিক্ষা

নারী শিক্ষার অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয়

ইকবাল কবির লেমন

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার নারী শিক্ষার অনন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম-সুখ্যাতি ও সুবাস ছড়াতে শুরু করেছে হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয়। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বাঙালি-যমুনাপাড়ের প্রান্তিক জনপদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ব্যতিক্রমি সব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের অন্তরে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের হরিখালী এলএসডি গোডাউনের পূর্ব পার্শ্বে স্থানীয় শিক্ষাহিতৈষী ব্যক্তিত্ব রাজিব কুমার জয়সোয়াল প্রদত্ব ২০ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। জায়গা থেকে শুরু করে অবকাঠামো সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় বিধানের একচ্ছত্র কৃতিত্বের অধিকারী বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রাজিব কুমার জয়সোয়াল। রাজিব কুমার জয়সোয়ালের পিতা স্বর্গীয় বিজয় প্রসাদ জয়সোয়াল এবং কাকা কিশোর প্রসাদ জয়সোয়ালের নামের প্রথম অংশ একত্রিত করে বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয়েছে হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠদানের জন্য আবেদনকৃত হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং বাছাইকৃত ৯ জন স্নাতকোত্তর ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী শিক্ষক নিয়ে তরতর করে এগিয়ে চলেছে সম্মুখপানে। বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রায় প্রতিদিন উপস্থিত থেকে শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ অরুপ কুমার গোস্বামী। শুধু দিক নির্দেশনাই নয় সভাপতির গুরু দায়িত্বের পাশাপাশি পাঠদানও করে চলেছেন তিনি। প্রধান শিক্ষক শুক্লা গোস্বামীর নেতৃত্বে একঝাঁক উদ্যমী-তরুণ শিক্ষক পাঠ্যপুস্তকের নির্ধারিত বিষয়বস্তুর পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন, দেশপ্রেম, মানবিকতা, নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নাচ-গান-কবিতা আবৃত্তি-বিতর্ক প্রতিযোগিতার মতো সহশিক্ষা।
হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব কুমার জয়সোয়াল বিদ্যালয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বাবা স্বর্গীয় বিজয় প্রসাদ জয়সোয়াল দরিদ্রতার কারণে শিক্ষালাভ করতে পারেন নি। আমার মা’র পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ থাকলেও অল্প বয়সে বাবার সাথে বিয়ে হওয়ার কারণে তিনিও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেন নি। এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মনেই চাঁপা দুঃখ ছিল। আমি বিষয়টি বড় হয়ে জেনেছিলাম। এর সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে নারী শিক্ষার আলাদা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার বিষয়টিও আমাকে তাড়িত করতো। বাবা-মায়ের দুঃখ আর নারী শিক্ষার আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার ঘটনাগুলো আমাকে উৎসাহিত করে হরিখালীতে একটি বালিকা বিদ্যালয় করার। এ ব্যাপারে আমি প্রথমেই কথা বলি সোনাতলার গুণী ব্যক্তিত্ব, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ অরুপ কুমার গোস্বামীর সাথে। তাঁর পরামর্শে, আমার বন্ধু তাহের শেখ ও এলাকার ছোটভাই পলিন মিয়ার সহযোগিতায় আমি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে আমার নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করি হরিখালী বিজয়-কিশোর বালিকা বিদ্যালয়। শুরু থেকেই আমরা বিদ্যালয়ের বাছাইকৃত অসহায় শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ, মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বৃত্তি প্রদান, শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবকদের পরামর্শ গ্রহণকল্পে বছরে দু’বার অভিভাবক সমাবেশ, দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ যত্ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দ্বারা বিশেষ সময়ে পাঠদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা এ প্রতিষ্ঠানটিকে একটি দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। সেজন্য সহযোগিতা কামনা করছি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button