মোঃ ইউসুফ আলী, আটোয়ারী(পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
সোমবার সারাদিন ঘন কুয়াশা আর শিরশিরে হিমেল বাতাসে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল । এদিনে সুর্য হাসেনি। কুয়াশা ভেদ করতে পারেনি সুর্যের উত্তাপ। ফলে শীতের দাপট তীব্রতর হয় এ জনপদে। বরফগলা শিরশিরে বাতাসে হাড়কাঁপানো ঠা-া বেশ অনুভুত হচ্ছে। এতে কাহিল হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জন জীবন। কাঁপছে নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। গত সপ্তাহের তাপমাত্রার উত্তাপ বৃদ্ধি পেলেও সোমবার উত্তরের জেলা গুলোতে আবারও জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ উঠানামা করলেও অধিকাংশ সময়ে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় বিরাজ করে। দেশের উত্তরে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্যে সবচেয়ে শীত প্রবণ জেলা পঞ্চগড়। এখানে নভেম্বরে শীতের আমেজ শুরু হলেও ডিসেম্বরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়ে থাকে ১১-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বরে গতবারের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সোমবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। যা দেশের সর্বনি¤œ। অথচ গতকাল রবিবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শাহজাহান জানান, এ অঞ্চলে পৃথিবীর উচ্চতম হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্ঘ থাকায় অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয় শীতের আমেজ। নভেম্বরের শুরু থেকে কমতে থাকে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে শীতের পরশ। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও বিকেল গড়লেই হিমেল হাওয়ায় শীতের পরশ অনুভূত হয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে শীতের প্রকোপ।কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে ভোরের প্রকৃতি। কুয়াশার কারনে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। স্থানীয় বাজার গুলোতে বেড়েছে শীতের পোশাকের চাহিদা। নি¤œবিত্ত মানুষেরা শীত নিবারণে বিভিন্ন হাটবাজারে ফুটপাতের দোকানে কাপড় কিনছেন। তবে এখনো সেভাবে শীত পড়েনি এখনো উত্তরাঞ্চলের শীত প্রবণ জেলা পঞ্চগড়ে। বিভিন্ন
হাটবাজার ও শহরের বিভিন্নস্থানে ফুটপাতে বসছে শীতের কাপড়ের দোকান। এসব দোকানে মিলছে সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, ট্রাউজার, টুপিসহ বিভিন্ন রকমের শীতের কাপড়। নি¤œবিত্ত মানুষেরা তাদের আয়ের সাধ্যমত কিনছেন এসব কাপড়। পঞ্চগড় শহরের অডিটোরিয়াম সংলগ্ন ও আটোয়ারীর ফকিরগঞ্জ বাজারের মুক্তিযোদ্ধা মুক্তাঙ্গন সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানে গরম কাপড় কিনতে আসা লোকজন বলেন, ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে গরম কাপড় কিনতে এসেছি। আমরা গরীব মানুষ বড় দোকানে গরম কাপড় কেনার সামর্থ নেই তাই এই ফুটপাতের দোকানে আসলাম। এদিকে তীব্র শীতের কারনে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। এসব রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকতে চিকিৎসকরা শীতে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। আধুনিক সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড়ের আরএমও ডাঃ আবুল কাশেম বলেন, পঞ্চগড়ে গত কয়েকদিন তাপমাত্রার উত্তাপ বেশ ছিল। কিন্তু গত রবিবার রাত থেকে ঠান্ডা বেশি হওয়ায় শীত জনিত রোগ বাড়তে পারে। আমাদের ১০০শয্যার জনবল দিয়ে দুইশ থেকে তিনশ রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আউটডোরের প্রতিদিন ৫শ থেকে ৭শ রোগী সেবা নিতে আসে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, হিমপ্রবণ জেলা হিসেবে পঞ্চগড়ে অন্যান্য জেলা থেকে এখানে শীত পড়ে আগে। এ অঞ্চলে নভেম্বর থেকেই শীতের আমেজ শুরু হয়। সোমবার সকালে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে। গতকাল থেকে তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি। রবিবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সামনে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে বলে তিনি জানান। জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর এ জেলায় শীত বেশি থাকে। এবারও শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছি। প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে ।