কাজের সন্ধানে সাঘাটার কৃষি শ্রমিকরা ছুটছেন যমুনার চরে

জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা(গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
এটা শহর থেকে বাড়ি ফেরার দৃশ্য নয়। আবার কোনো হাট-বাজারে যাওয়ার দৃশ্যও নয়। জীবন-জীবিকার টানে দল বেঁধে নৌকায় চড়ে কাজের সন্ধানে কৃষি শ্রমিকদের চরে ছুটে চলার দৃশ্য। খেঁয়ার নৌকার ভেতরে মানুষের ভিড়ে পা রাখার মতো কোনো জায়গা নেই। এভাবেই সূর্য্য ওঠার আগেই নদী পাড়ি দিয়ে কাজ পেতে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কৃষি শ্রমিকরা ছুটে যান যমুনার চরে। নৌকায় গাদাদিভাবে চড়ে নদী পাড়ি দেওয়া মারাত্মক ঝুঁকি, তারপরও উপজেলার মূলভুখন্ডের কৃষি শ্রমিকরা তাদের শ্রমের বিনিময়ে রোজাগারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় গাদাগাদি ভাবে চড়েই কাজের সন্ধানে প্রতিদিন পাড়ি দিচ্ছেন যমুনা নদী।
সাঘাটা এলাকায় যমুনা নদী বেষ্টিত,হাটবাড়ি, কালুরপাড়া,কুমারপাড়া,গুয়াবাড়ি,হলদিয়া,কানাইপাড়া,দক্ষিণ দীঘলকান্দি, উত্তর দীঘলকান্দি, পাতাতিলবাড়ি, গাড়ামারা, গাড়ামারা সিপি, গোবিন্দপুর সহ অন্তত ২০টি চর রয়েছে। আগষ্ট মাস হতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুমে এ চর গুলোতে আমন ধানের আবাদ তেমন না হলেও মরিচ,বেগুন,পেঁয়াজ, রসুন,তিল,তীষি, কুমড়া সহ নানা ধরণের সবজির চাষ হয় প্রচুর। এ কারণে রবি মৌসুমে যমুনা নদীর চর গুলোতে কৃষকের জমিতে প্রচুর কাজ থাকে। এতিকে উপজেলার মূলভুখন্ডের কৃষি জমিতে শুধু আমন ব্যতিত অন্য তেমন কোনো ফসল না থাকায় এখানে কৃষি শ্রমিকদের জন্য তেমন কাজও থাকে না। ফলে সেখানকার বেকার কৃষি শ্রমিকরা জীবন-জীবিকার টানে কাজের সন্ধানে যমুনার চর গুলোতে প্রতিদিন ছুটে যায় । বর্তমানে চরের জমিতে মরিচ,বেগুন সহ নানা সবজি ক্ষেতে ক্ষেতে নিড়ানীসহ পরিচর্জার কাজ চলছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষি শ্রমিকরা প্রতিদিন ফজরের নামাজের আজানের ধ্বনী শুনে ঘুম থেকে ওঠে সামান্য নাস্তা-পানি খেয়ে সূর্য্য ওঠার আগেই নদী পাড়িতে ছুটে যান নদীর ঘাটে। নদীর ঘাটে কেউ যান পায়ে হেটে কেউ বা আবার ভ্যান-অটোতে করে। প্রতিদিন সাঘাটার দুই থেকে তিনটি খেঁয়াঘাট হয়ে অন্তত ছয় থেকে আট শত কৃষি শ্রমিক চরগুলোতে গিয়ে গৃহস্থের কমিতে কাজ করছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সারা দিন জমিতে কাজ করে নগদ মুজুরি নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফেরেন শ্রমিকরা।
চিনিরপটল গ্রামের বাসিন্দা কৃষি শ্রমিক আলতাব (৫৫) বলেন, এ সময় আমাদের এলাকার গৃহস্থদের জমিতে কোনো কাজ নেই, চরে এখন প্রচুর কাজ। চরে গেলে ফিরে আসতে হয়না। মরিচ, বেগুন সহ নানা সবজির ক্ষেত নিরানির কাজ চলছে। প্রতিদিন চরে গেলেই কাজ পাওয়া যায়। গৃহস্থরা নদীর ওপাড়ে ঘাটে অথবা রাস্তায় শ্রমিকের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। চরের কাজে মজুরিও নগদ পাওয়া যায়। প্রতিজন গৃহস্থ ১০ থেকে ১৫ জন করে শ্রমিক কাজ করতে পারে। ছিলমানের পাড়া গ্রামের আমির হোসেন (৪৫) জানান, প্রতিদিন সূর্য্য ওঠার আগে নদী পাড় হতে হয়। সারাদিন কাজ করার জন্য মজুরি ৩ শত থেকে সাড়ে তিনশত টাকা পাই এর মধ্যে ২০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে বাকী টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। বেকার বসে থাকলে তো সংসার চলে না।