বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান এবং অভিজ্ঞ উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বহু স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী তিনি। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মুশফিক। নিজের পোস্টে মুশফিক লেখেন— "আলহামদুলিল্লাহ, সর্বকিছুই আল্লাহর অনুগ্রহ। বিশ্ব ক্রিকেটে আমাদের সাফল্য হয়তো সীমিত ছিল, তবে আমি যখনই দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছি, সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে ১০০% এর বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেছি।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত কয়েক সপ্তাহ তাঁর জন্য বেশ কঠিন ছিল এবং এই সময়ের মধ্যেই তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, এটাই তাঁর জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা অপমান করেন।” (সূরা আলে ইমরান: ২৬) তিনি তাঁর পরিবার, বন্ধু, সতীর্থ এবং ভক্তদের প্রতিও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন— "আমি আমার পরিবার, বন্ধু এবং সেইসব অনুরাগীদের ধন্যবাদ জানাই, যাঁদের জন্য আমি গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছি।" ২০০৬ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেকের পর থেকে ওডিআই ফরম্যাটে মুশফিক ছিলেন দলের অন্যতম স্তম্ভ। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস, উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং দলের নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ক্রিকেটার হিসেবে। ওডিআই ক্যারিয়ারে তাঁর অর্জনও কম নয়। ২৭৪টি ম্যাচে ২৫৬ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৬.৪৩ গড়ে করেছেন ৭৭৯৫ রান। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৯টি হাফ-সেঞ্চুরি। ব্যাট থেকে এসেছে ৬১৭টি চার ও ১০০টি ছক্কা। শুধুমাত্র ব্যাট হাতে নয়, উইকেটকিপার হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা গ্লাভসম্যান হিসেবে তিনি রেখে গেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। মুশফিকের ওডিআই থেকে অবসর বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক যুগের সমাপ্তির ইঙ্গিত। তিনি শুধু একজন ক্রিকেটার নন, বরং ছিলেন দলের প্রাণ। তাঁর লড়াকু মানসিকতা, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা এবং ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। যদিও তিনি টি-টোয়েন্টি, ওডিআই থেকে বিদায় নিয়েছেন, তবে টেস্টে খেলা চালিয়ে যাবেন কিনা, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতা এখনো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মুশফিকুর রহিমের অবসরের পর বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে একটি বিশাল শূন্যতা তৈরি হবে, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও ক্রিকেটীয় মেধা আগামী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর অভাব পূরণ করা সহজ হবে না, তবে তাঁর রেখে যাওয়া অনুপ্রেরণা নতুনদের পথ দেখাবে।